
অর্থনীতির ৩০ দিন সংবাদ :
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের’বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারিদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী উর্ত্তীণ হয়েছেন। ১২ শতাংশ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হন। তবে ব্যাংক কর্তৃপ্ক্ষ তাদেরকে সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ দিয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর নেয়া এই পরীক্ষার ফলাফল ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়।
ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে’বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত ও ৪ হাজার ৭৭১ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে।
সুত্র জানায় ,বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় প্রাথমিকভাবে ৪,৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি করা হয়। চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাদের মধ্য থেকে ২০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সব ঘটনায় ব্যাংকটিতে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সুেত্র আরো জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) তত্ত্বাবধানে এই বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মীকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে তাদের মধ্যে অংশ নেন মাত্র ৪১৪ জন। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সত্ত্বেও বেশিরভাগ কর্মী পরীক্ষাটি বর্জন করেন।
যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে নিয়োগ পাওয়া। এই সময় ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই কর্মকর্তাদের অনেকেই চট্টগ্রামের, বিশেষ করে এস আলমের শক্তিশালী ব্যবসায়িক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
অভিযোগ রয়েছে, সে সময় কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরে এস আলমের বাড়িতে ও অফিসে বক্স স্থাপন করে প্রার্থীদের চাকরির আবেদন সংগ্রহ করা হতো।
ব্যাংকের এক লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সে সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ৭ হাজার ২২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি শুধু পটিয়া থেকেই নিয়োগ পান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রায় ২ হাজার ৫০০ কর্মী বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তার জাল সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ২৯ আগস্টে নতুন দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দিলে কর্মকর্তাদের একটি অংশ ২৭ আগস্ট আদালতে গিয়ে পরীক্ষা স্থগিত ও বাতিল চেয়ে রিট করেন। পরে আদালত বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করে যে, বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না-রাখার বিষয় ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলেন, এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকাকালে নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ ওঠায় ব্যাংকে জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য এই পরীক্ষা নেওয়া জরুরি ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয় নয়। তবে অতীতে কেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং এখন কেনই বা কর্মী ছাঁটাই করার জন্য মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সিনিয়র অফিসার থেকে শুরু করে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয় নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।




















