
খোন্দকার জিল্লুর রহমান :
গ্রাহকের পাওনা প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা রেখে প্রায় শূন্যের কোঠায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সম্পদ, সম্প্রতি এমনই একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় একাদিক অনলাইনসহ বহু বাংলা এবং ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতে, যেখানে বীমা গ্রাহকদের দাবী পরিশোধে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক সংকটের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুসারে বীমা গ্রাহকদের কাছে তাদের প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা দায় রয়েছে, যা দাবী নিষ্পত্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে।
এখন পুরু বীমা সেক্টরের অভিভাবক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে ইন্স্যুরেন্স ডেভলাপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথোরেটি (আইডিআরএ) কে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভুমিকায় আইডিআরএ প্রশ্নবিদ্ব হওয়ার কারন আইডিআরএ বীমা সেক্টরের চিহ্নিত লুটেরা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে রক্ষা করে চলেছে বলে অভিযোগ আছে। এটা প্রমানিত যে, ফারইস্ট লাইফের বড় লুটপাটের সময় অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আইডিআর এর বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, এফসিএ। বিএসইসি এর স্পেশাল অডিটে দেখাযায় (আদালতে দাখিলকৃত প্রমান অনুযায়ী) এ সময়ে কোম্পানিটিতে ন্যায় গতভাবে ২,১৬৫ কোটি টাকার দুনীতি প্রমানিত হয়েছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লুটপাটের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেক উভয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ফারইস্ট ইসলামি লাইফের উদ্বোক্তা পরিচালকসহ ৭জন সাবেক পরিচালকের মামলার প্রেক্ষিতে গত ১১ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার মামলাটি শুনানীর জন্য গ্রহন করে উচ্চ আদালত। এক্ষেত্রে অভিযুক্তরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য এই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের একক বেঞ্চে এ আদেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী একেএম বদরুদ্দোজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বতর্মানে এম এ খালেক পাসপোর্ট জটিলতায় দেশে থাকতে বাধ্য হলেও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। পরবর্তিতে বিশ্বস্ত গোপন সুত্রে যানা যায় নজরুল ইসলাম গত ডিসিম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরেন এবং নিয়মিত বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ এর লাইট হাউজে অফিস করার পাশাপাশি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়ত করেন।
নজরুল ইসলাম দেশে আশা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তার (নজরুল ইসলাম) এবং এম এ খালেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা দায়ের করেন কোম্পানির ৭জন সাবেক পরিচালক। এরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম, হেলাল মিয়া, কামরুল হাসান, শামসুল হক, মুসলিমা শিরিন, নাজনীন হোসেন এবং আয়শা হুসনে জাহান। তবে ৭ জনের মধ্যে মধ্যে- মো. ফখরুল ইসলাম, যিনি কোম্পানীর উদ্বোক্তা পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, কিন্তুু খালেক-নজরুলের দুর্নীতির মহাযগ্যে ২০০৯ সালে পরিচালনা পর্যদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। বাকি ৬জন পরিচালক সম্প্রতি বিএসইসি কর্তৃক অপসারিত পর্যদের সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী গত ১০/১২ বছরে বীমা খ্যাতের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট এবং হযবরল চিত্র, বিশেষ করে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোপানীগুলির চেয়ে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোপানীগুলির কর্মকর্তারা বেশি এগিয়ে আছে, এটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোপানীগুলির কর্মকর্তাদের অবস্থা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আর বর্তমানে বীমা খাতের অভিভাবক হিসাবে আইডিআরএ কতটুকু দায়িত্বশীল তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তার প্রমান পাওয়া যায়। বিশেষ করে লেজুড়বিত্তি, অযোগ্যতা, অদক্ষতা, ক্ষমতা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে না পেরে এসব লোকেদের সাথে টম অ্যন্ড জেরি খেলার মাধ্যমে বীমাখাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেন্স ডেভলাপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথোরেটি (আইডিআরএ) বীমা খাতটিকে উন্নয়নের পরিবর্তে বিতর্কিত করে রেখেছেন।
বড় বড় পদ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগন এবং নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থার প্রধানদের কারন-ই বীমা খাতে এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে অনেকে মতামত দেন। আবার কেহ কেহ বলেন, সরকারের জবাব দিহিতা না থাকার কারনে নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থার প্রধানরা নিজেদের মধ্যে কৌশলে আরেকটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজেদের রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন। অনেক সময় এদের কাউকে কাউকে চিহ্নিত করা গেলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সুযোগ সন্ধানীরা তখন সুকৌশলে সেই সরকারে ভেতরে স্থান করে নিয়ে রাষ্ট্রের চলমান অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে নিজেরা স্বার্থ হাসিলে তৎপর হয়ে ওঠে, এদের অবস্থান খুবই শক্ত। যা একটা উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। সরকারও নাকি এদের থেকে সুযোগ সুবিধা (আর্থিক ও রাজনৈতিক) আদায় করে থাকে, যার ফলে প্রশাসন, সরকার এবং আইন শৃক্ষলা বাহিনী প্রকৃত অপরাধীদের বের করে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না। ধারাবাহিক ভাবে চলবে….




















