বেতন-ভাতা বন্ধ, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, বেহাল অবস্থা এনটিসির

অর্থনীতির ৩০ দিন ডেস্ক :
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) হবিগঞ্জ জেলার ৪টি চা বাগানের চা পাতা উত্তোলন কার্যক্রম প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বাগানগুলো হলো জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত চন্ডিছড়া ও পারকুল এবং মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর। এসব চা বাগানের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক বেকার সময় পার করছেন। বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। অর্থাভাবে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকানাধীন এক সময়ের লাভজনক এনটিসির চা বাগানগুলো তীব্র অর্থ সংকটে রয়েছে। চায়ের উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থসংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা মালিক ও শ্রমিকদের।
বাগান সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এনটিসির চেয়ারম্যান ও সাত পরিচালক একযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এতে আটকে যায় ব্যাংক ঋণ। ফলে অর্থ সংকটে পড়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন। পরিষদের সাত পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে লস্করপুর ভ্যালির মূল চারটি বাগানসহ সাতটি চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মরতদের বেতন-রেশন আটকে যায়। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে কোম্পানির আওতায় থাকা অন্য বাগানগুলোতে।
চন্ডিছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা বাগানের প্রায় তিন হাজার শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ হয় ২২ আগস্ট থেকে। পরে শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কোনো সমাধান না পেয়ে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। এরপর থেকে থমকে গেছে বাগানের উৎপাদন। প্রতিটি বাগানে দিনে ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি নতুন কুঁড়ি ও কঁাঁচা পাতা উত্তোলন করা হয়। শ্রমিক না থাকায় এসব কুঁড়ি ও কচি পাতা নষ্ট হচ্ছে গাছেই। এতে চলমান সংকটের পাশাপাশি উৎপাদনে ধসের কারণে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
চা বাগানের শ্রমিক সুরঞ্জিত পাশি, হীরেন্দ্র ব্যানার্জি, বনীতা তাঁতী, শ্রীমতি অধিকারী, গোপেশ প্রাণ তাঁতী ও গায়েত্রী তাঁতী বলেন, আমাদের তিন মাস ধরে বেতন ও রেশন বন্ধ। যারা বাইরের কাজ করতে পারেন, তাঁরা কোনোভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা বাইরে কাজ করতে পারি না, কষ্টে দিন যাপন করছি। এক বেলার খাবার তিন বেলা খেতে হচ্ছে। আমাদের কথা কেউ শোনে না। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি খোকন তাতি বলেন, বেতন ছাড়া প্রায় চার সপ্তাহ শ্রমিকরা কাজ করেছেন। এরপর বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন।
আগস্টের ১৫ তারিখ থেকে বেতন বন্ধ আছে বলে জানান চন্ডিছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার। তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ায় অনেক শ্রমিকের পরিবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছে। পাঁচ সপ্তাহ বেতন না পাওয়ার পরেও আমরা কাজ করেছি। পরে এনটিসির হবিগঞ্জে চারটিসহ ১২টি বাগানে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বলেন, চা বাগান ও শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে বসার কথা রয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বাগানগুলো। ন্ডিছড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার সেলিমুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। এই সময়ের মধ্যে চা গাছের পাতাগুলো বড় হয়ে গেছে। বাগানের অনেক পরিমাণে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।
সিলেটে সংহতি সমাবেশ
স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, লাক্কাতুরা, কেওয়াছড়া, দলদলিসহ এনটিসির সকল বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও বাগান রক্ষার দাবিতে শনিবার বিকেল ৪টায় লাক্কাতুরা স্টেডিয়াম গেটে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সিলেট জেলা সভাপতি বীরেন সিংয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য শিপন পালের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, উজ্জ্বল রায়, ৬নং টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান সফিক, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, সাংবাদিক দেবাশীষ দেবু, চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হৃদেশ মুদি, হিলুয়াছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মদন গঞ্জু, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মুখলেছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ রুদ্র।
সূত্র : জনকন্ঠ