
অর্থনীতির ৩০ দিন প্রতিবেদন :
দেশের ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছরের জুন শেষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এর তিন মাস আগের মার্চ শেষে ২৩টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নতুন করে এনআরবিসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক মূলধন ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যাংকে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিপুল পরিমাণ ঋণ গৃহীত হয়, যা পরবর্তীতে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব লুকানো খেলাপি ঋণ প্রকাশ পায়। ফলে ব্যাংকগুলো চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে পারছে না, যা মূলধন ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ—যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকার কথা। মার্চ শেষে এ অনুপাত ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি জনতা ব্যাংকের—১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংক ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৪ হাজার ১৭৩ কোটি ও বেসিক ব্যাংক ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে।
বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক—৮ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এরপর এবি ব্যাংক ৬ হাজার ৭৭৫ কোটি, পদ্মা ব্যাংক ৫ হাজার ৬১৯ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ৪ হাজার ৫১ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংক ১ হাজার ৬৪০ কোটি, ইউসিবিএল ১ হাজার ৩৮৫ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংক ৩১৬ কোটি, সিটিজেন ব্যাংক ৮৬ কোটি ও সীমান্ত ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকের—২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (১৮ হাজার ৫০৪ কোটি) ও তৃতীয় স্থানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা)। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার ৫৫২ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৭৯ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১ হাজার ৯৭৫ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯০১ কোটি এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ২৫৪ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের—২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা, যা দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।




















